চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়ন ফোরাম জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবিক অগ্রগতির জন্য একটি সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প গ্রহণ করেছে। নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে এলাকার প্রতিটি মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা। ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি সেবা সহজীকরণ করা হবে, যেন সাধারণ মানুষকে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হতে না হয়।

নৈতিক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে ১০০% সাক্ষরতা অর্জন, শিক্ষা ব্যয় হ্রাস এবং ডিজিটাল সুবিধাসম্পন্ন স্মার্ট স্কুল গড়ে তোলা হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ প্রতিটি ইউনিয়নে টেকনিক্যাল ও আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে। তরুণ ও নারীদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, মেধাবীদের বৃত্তি ও সহায়তা তহবিল এবং ‘ওয়ান-ফর-অল’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজন দক্ষ সদস্য গড়ে তোলা হবে।

উপজেলা হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক যন্ত্রপাতি, আইসিইউ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। ইউনিয়নভিত্তিক ২৪ ঘণ্টা চালু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ইউনিট এবং ‘গ্রাম ক্লিনিক টু স্পেশালিস্ট’ রেফারেল ব্যবস্থার মাধ্যমে সবার জন্য সুলভ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। মাতৃ-শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, মশক নিধন ও আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সেবার মাধ্যমে একটি সুস্থ ও নিরাপদ জনপদ গড়ে তোলা হবে।

আইসিটি পার্ক, শিল্পাঞ্চল ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রসমন্বিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। কৃষকদের আধুনিক বীজ, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, সেচ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা, সরকারি ক্রয়কেন্দ্র, হিমাগার ও ডিজিটাল বাজারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য স্টার্টআপ ফান্ড, সহজ ঋণ ও ওয়ান-স্টপ সেবা চালু হবে। পাশাপাশি কুটির ও হস্তশিল্প সংরক্ষণ, শ্রমিক অধিকার রক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ‘এক গ্রাম, এক পণ্য’ নীতির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা হবে।

নদীর করাল গ্রাস থেকে জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভাঙনপ্রবণ প্রতিটি পয়েন্টে ব্লক ডাম্পিং ও জিও-টিউবের মাধ্যমে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা। আধুনিক দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং ভাঙনকবলিত ও গৃহহীন পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। স্থায়ী ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদীভাঙন প্রতিরোধে নদী ড্রেজিং ও খালখনন কার্যক্রম সহ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ, স্লুইস গেট মেরামত ও সংষ্কার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্মসূচী নেয়া। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য আধুনিক দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং গৃহহীন পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

সেতু নির্মাণ, সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা, উপজেলার প্রধান সড়কগুলো ২ লেনে উন্নীত করা।প্রতিটি প্রধান গ্রামীণ সড়ক বিশেষ করে বাজার সংযোগ রাস্তাসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাকা ও সংষ্কার করা এবং পর্যায়ক্রমে কাঁচা রাস্তাগুলোকেও টেকসই পাকা রাস্তায় রূপান্তর করা।অসম্পূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্টসমূহের কাজ সম্পন্ন করা।জেলা ও চরসমূহের সাথে আন্তযোগাযোগ স্থাপন, জরুরী যোগাযোগ ব্যবস্থা ও লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলোকে আধুনিকায়ন করা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ এবং প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে।গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহ।

কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ইপিজেড’ (EPZ) স্থাপন করা হবে। আম, রেশম ও লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় হিমাগার স্থাপন এবং প্রক্রিয়াজাত করে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জুস ফ্যাক্টরী, অটো রাইস মিলসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। কৃষিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে এবং সার, বীজ ও সেচে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা হবে। কৃষি জমি সংরক্ষণ এবং কৃষকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, কিশোর গ্যাং, অবৈধ বালু উত্তোলন, চরদখল ও অপরাধ দমনে প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর করা।নারী ও শিশুর নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অসহায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সিনিয়র সিটিজেন, নারী, শিশু, সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে এবং তাদের জন্য বিশেষ ভাতা ও অগ্রাধিকার সেবা চালু করা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘিরে পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে নিয়মিত উৎসব-মেলা আয়োজন, প্রতিটি ইউনিয়নে খেলার মাঠ, শিশু পার্ক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের পাশাপাশি একটি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।